Logo

Logo

আজকাল রেজাল্ট খারাপ হওয়ায় আমি একান্তই নিচের কারণগুলোকে দায়ী করি/Why our results are not improving

পুরোটুকু পড়ার অনুরোধ রইল......

১। ব্যক্তি মনোভাব??
বর্তমানে আমাদের শিক্ষকরা হয়েছেন এমন, নিজে বাঁচলে বাপের নাম। অর্থাৎ তারা নিজের ছেলে মেয়েকে ভাল করে পড়াবেন, ভাল স্কুলে পাঠাবেন। কিন্তু তারা ভুলেই যান, আমি যে টাকা পাচ্ছি তা একটা বড় দায়িত্ব থেকে আসছে। সরকার তাদের ঐ সব স্টুডেন্ট দের পড়ানোর জন্য, ভাল রেজাল্টের জন্য মাসে মাসে ভুড়ি ভুড়ি টাকা দেন । অথচ আমাদের শিক্ষকরা এই মহান দায়িত্ব নিয়ে শুধু মাসের টাকা আর নিজের ছেলেমেয়েকে মানুষ করতে হবে, তাতেই বেশি মনোযোগী হন। দায়িত্বের কথা মনেই রাখেন না। আসলে দায়িত্বটা তখন হয়ে যায় এরকম আজকে কয়টা ক্লাস নিতে হবে, আর কতক্ষণ স্কুলে বা কলেজে থাকব।

২। কোচিং ব্যবসা??
বর্তমানে বাংলাদেশের টিচারদের কোচিং ব্যবসাটা খুব ভালই চলতেছে। ক্লাস তাইরে নাইরে আর কোচিং এ বেশি ভাল করে নাকি পড়ান। এই স্যারের কাছে এই প্রাইভেট ওই স্যারের কাছে ওই প্রাইভেট,অমুক স্যারের কাছে না পড়লেই নয়। এতে স্টুডেন্টরা অনেক বেশি চাপ মনে করে। ফলে তারা একটি পড়তে গিয়ে আরেকটি পড়তেই পারে না। সাধারণ পরিবারদের গুণতে হয় বেশ ভালই টাকা।


৩। শিক্ষকদের বলছি??
আল্লাহ্‌ ও বাবা-মা এর পড়েই আপনাদের স্থান। স্টুডেন্ট রা যদি কারো কথা প্রথম দুই জনের পড়ে মাথা নত করে পালন করে, তবে সেই লোকটি আপনারাই। ভাল শিক্ষক নেই বললে ভুল হবে, আছেন। দুএকজন কে দেখেছি যারা স্কুলের ভাল চেয়েছেন, স্কুলে Extra ক্লাস এর ব্যবস্থা করেছিলেন। সময় নিয়ে তাদের ভাল করে বোঝান। না বুঝলে বার বার বোঝান। বর্তমানে সৃজনশীল। তাই বইয়েও অনেক পরিবর্তন চলে এসেছে। কিন্তু কিছু শিক্ষক আছেন যারা এখনও সেই আগের যুগের মতো পড়াশুনা করান। এই চিন্তাধারা পাল্টাতে হবে। সৃজনশীল নিয়ে খুব বেশি জানেন না তারা, আর জানলেও এতটুকু জানেন যে আজকাল মুখস্ত করলে চলে না। আবার অনেকেই সৃজনশীল ট্রেনিং প্রাপ্তও নন। এমন কিছু জিনিস আছে যা অল্প লিখলেই ভাল মার্কস পাওয়া যায় তা স্টুডেন্ট দের অবগত করতে হবে। অনেক টিচারই আছেন যাদের প্রপার জ্ঞান নাই। টাকার জোরে প্রতিষ্ঠানে চাকরি নিয়েছেন। তাদেরকে দেখা যায় আলাদা রকম। স্টুডেন্ট এদের প্রশ্নই করতে পারে না। প্রশ্ন করবে কি? ধমক আর লাঠির সামনে প্রশ্নের সুযোগই পায় না। ফলে তাদের জানতে চাওয়ার প্রবণতা কমে যায় । তাদের অবাধে প্রশ্ন করার সুযোগ দিতে হবে। প্রাইমারী লেভেলের শিক্ষকদের অনেক বেশি ভূমিকা পালন করতে হবে।

৪। মোটিভ ক্লাস এর ব্যবস্থা??
পড়ার কোনো শেষ নেই। কেউ পড়তেছে ডিগ্রি এর জন্য, কেউ পড়তেছে চাকরি করে ফ্যামিলিকে সাপোর্ট করতে হবে এই জন্য, খুব কম সংখ্যক স্টুডেন্ট আছে যারা শুধু জ্ঞান অর্জনের জন্য পড়ে। প্রথম শ্রেণীর স্টুডেন্ট (ট্যালেন্ট) খুব কমই হয়। দ্বিতীয় (মোটামুটি ভাল) ও তৃতীয় (দ্বিতীয় শ্রেণীর চেয়ে কম/তেমন ভাল না)শ্রেণীর স্টুডেন্ট অনেক বেশি হয়। ২য় ও ৩য় শ্রেণীর স্টুডেন্ট অনেক বই পড়তে পড়তে বোরিং হয়ে যায়। তারা তাদের পড়ার উদ্দেশ্য হারিয়ে ফেলে। ফলে বন্ধুদের সাথে আড্ডা, ফাকিবাজি আর কিছু বাজে কাজে লিপ্ত হয়। এমতাবস্থায় তাদের মোটিভ ক্লাস এর ব্যবস্থা করতে হবে। পৃথিবীতে ঘটে যাওয়া সমস্যাগুলো ও সুক্ষ্ম সমাধান তাদের সামনে তুলে ধরতে হবে। বিখ্যাত ব্যক্তিদের সফলতার কথা তাদের শুনাতে হবে। তোমাকে দিয়ে হবে না, এই কথাটুকু অনেক প্রভাব ফেলে একজন স্টুডেন্ট এর উপর । তাই হতাশা নয়, তাদের আশার আলো দেখাতে হবে গল্পের মাধ্যমে। ভুল করতেই পারে, তবে সেই ভুলে ক্ষতি কি সেটা তাদের মাথায় ভাল করে ঢুকিয়ে দিতে হবে। তাহলে সে ভুল তারা আর কখনো করবে না। এই সমাজে অনেক বাবা মাই আছেন যারা তাদের সন্তানদের অনেক শিক্ষাই দিতে পারেন না, যা আমার থেকে আপনারাই ভাল জানেন । প্রয়োজনে আপনারা ইউটিউব চ্যানেল "শিশু লালন পালন" ও Sandeep Maheshawri এর ভিডিও থেকে সঠিক ধারণা নিতে পারেন।

৫। ঐক্যজোট ??
শিক্ষকদের মধ্যে একতা নেই। আমাদের ঐক্যজোট হতে হবে। দায়িত্বের কথা সব সময় স্মরণ রাখতে হবে। সবাই মিলে স্কুলে নতুন কিছু করার কথা ও স্টুডেন্ট দের ভাল ফলাফল নিয়ে গবেষণা করতে হবে। প্রয়োজনে ভাল শিক্ষক, অভিভাবক, জ্ঞানী মানুষ, ভাল স্টুডেন্টদের পরামর্শ নিতে হবে। সবার থেকে পাওয়া ভাল ও উত্তম পন্থাটি অবলম্বন করতে হবে এবং তা সবাই সাদরে গ্রহন করবেন। প্রক্রিয়া অবশ্যই দীর্ঘস্থায়ী করতে হবে। আমাদের একটা স্বভাব আছে--- যে কোন কাজ কয়েকদিন করেই ছেড়ে দেয়ার অভ্যাস অনেক বেশি।

৬। ছাত্র-ছাত্রীদের কিভাবে পড়তে হবে??
পূর্বের প্রশ্নধারা ছিল সীমাবদ্ধ। তাই বেশ কিছু জিনিস মুখস্ত করলেই হয়ে যেত। আজ সেটা সম্ভব নয়। অনেক জানতে হয়। তাই পড়ার প্যাটার্ন পাল্টাতে হবে। important জিনিস দাগাই পড়তে হবে। পড়তে হবে নতুন কিছু শেখার জন্য, নতুন কিছু মুখস্ত করার জন্য নয়। একটা জিনিস বুঝতেছি না! কেন বুঝতেছি না তা নিয়ে ঘাটতে হবে বেশি বেশি করে। নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখতে হবে, রাখতে হবে অনেক ধৈর্য। না পারলে বন্ধু বান্ধব ও শিক্ষকদের সাহায্য নিতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা হলো-- ছাত্রছাত্রীদের বই ঘাটাঘাটি করার ও যে জিনিসটা পারতেছি না সেটা নিয়ে গবেষণা করতে হবে। ওই জিনিসটি দুই তিনটা বইয়ে ঘাটতে হবে। প্রয়োজনে গাইড ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে Idea বাড়বে। নিজের মধ্যে একটা ধারণা চলে আসবে এবং ধীরে ধীরে সহজ মনে হবে।

৭। প্রাইভেট স্কুল বা কলেজ এর সাথে তুলনা??
প্রাইভেট স্কুলের রেজাল্ট অনেক ভাল হয়। কেন ভাল হয় জানেন, সেখানের শিক্ষকরা অনেক বেশি দায়িত্ববান। তারা বেতন পান অনেক কম, অথচ শ্রম ও করেন অনেক। সেখানে স্টুডেন্ট দের মাঝে একটা competition শুরু হয়। ফলে স্টুডেন্ট রাও পড়াশোনায় অনেক বেশি মনোযোগী হয়। Complain box করতে হবে। কোন টিচার ভাল পড়াচ্ছেন না, স্টুডেন্টরা তা নীরবে জানাবে। প্রধান শিক্ষক স্বহস্তে এর পদক্ষেপ নিবেন। একটা কথা শুনেছিলাম, যে কাজটা মানুষ অল্প করলেও/না করলেও টাকা পায়, সে কাজের প্রতি মানুষ ততটা জোর দার হয় না। তাই যে কাজের জন্য বেতন নিবেন, সে কাজের প্রতি আমাদের দৃঢ় মনোযোগী হওয়া উচিত।

৮। প্রশ্নপত্র ফাঁস??
আর একটি কথা না বললেই নয়, প্রশ্ন পত্র ফাঁস একটি মারাত্মক সমস্যা। এটি রেজাল্ট খারাপ এর একটি মূল কারণ। একজন স্টুডেন্ট প্রথম দিন প্রশ্ন পেয়ে ভাল পরীক্ষা দিল। কিন্তু পরের দিন সে তিন চার টা প্রশ্ন পেল, কোনটা পড়বে আর কোনটা বাদ দিবে। আবার কোন কোন দিন প্রশ্নের জন্য অপেক্ষা করতে করতে আসল পড়ায় ভুলে যায়। তাই প্রশ্নের চিন্তা বাদ দিয়ে বই পড়ুন, ইনশাআল্লাহ পরীক্ষায় সব কমন পাবেন।

৯। উপরমহলের কাজঃ
সরকারি ভাবে একটি টিম গঠন করতে হবে, যার দায়িত্ব হলো প্রতি স্কুলে স্কুলে গিয়ে কেনো স্কুলের রেজাল্ট খারাপ হলো সকল টিচারদের তার জবাবদিহিতা করতে হবে। প্রয়োজনে এমন কিছু করতে হবে- যা স্কুলের ভাল রেজাল্ট করাতে ভূমিকা পালন করে। স্কুল/কলেজ গুলোয় দলীয় কোন প্রকোপ থেকে একেবারেই বিরত থাকতে হবে।

১০। পরীক্ষার হলে গার্ডঃ
বোর্ডের পরীক্ষাগুলোয় সাধারণত এক কলেজের/স্কুলের স্টুডেন্ট আরেক কলেজে/স্কুলে যায়। এমনও দেখা গেছে, আজকে আমাদের স্টুডেন্টদের খুব কড়া গার্ড দেয়া হয়েছে, কালকে ওই কলেজের স্টুডেন্টদের দেখাই দিব গার্ড কাকে বলে। এই ধরণীতে কেউ সবজান্তা নয়। টিচারদের এমন আচরণে স্টুডেন্টরা ভীত হয়ে যায়, তাদের মনে সবসময় একটি ভয় কাজ করে। ফলে তারা তাদের preparation এর প্রতি confidence হারিয়ে ফেলে। এই বুঝি তার খাতা নিয়ে নিল, এই ভয়ে তার পরীক্ষা হয়ে যায় খারাপ। আমাদের আন্তরিক হতে হবে। পরীক্ষার হলে গার্ড নিয়ে সাধারণ বৈঠকে আলোচনা করতে হবে। এমন হতে হবে যেন, সাপও মরে, লাঠিও না ভাঙ্গে।

আমি শিক্ষকদের বিরুদ্ধে লিখছি না, শুধু আমাদের একটু পরিবর্তন হতে বলছি.........

আমি নিজেও একজন দ্বিতীয় শ্রেণীর (মোটামুটি ভাল)স্টুডেন্ট। আরও অনেক কিছু লেখার ছিল। আমার ওয়েবসাইট ও ইউটিউব চ্যানেল কিছুদিন পরে ছাড়তেছি তার মাধ্যেমে জানিয়ে দিব। পোস্টটিতে সব আমার নিজের মতামত ব্যক্ত করলাম। ছোট মানুষ হিসেবে অনেক কথা বলে ফেললাম। ভুল হলে কমেন্টে জানাবেন ও ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

No comments

Powered by Blogger.